বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রশ্নপত্রে স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ আখ্যা দেওয়ার ঘটনায় তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। এবার এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানালেন মেদিনীপুর আদালতের আইনজীবীদের একাংশ। একই সঙ্গে এই ঘটনা প্রসঙ্গে তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। (আরও পড়ুন: IIM কলকাতায় হস্টেলে ধর্ষণ তরুণীকে, গ্রেফতার অভিযুক্ত ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়া)
আরও পড়ুন: বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নে শহিদদের 'সন্ত্রাসবাদী' উল্লেখ, তুমুল বিতর্ক
শুক্রবার মেদিনীপুর জর্জ কোর্টের একাধিক আইনজীবী ঘোষণা করেন, তাঁরা এ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছেন। একই সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। তাতে ঘটনার নিরপেক্ষ ও উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।আদালতের আইনজীবী তীর্থঙ্কর ভকত বলেন, মেদিনীপুরের বীর বিপ্লবীদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে বিকৃত করে তাঁদের সন্ত্রাসবাদী তকমা দেওয়া চরম লজ্জাজনক এবং অপমানজনক। এটা শুধু ভুল নয়, মেদিনীপুরবাসীর আত্মপরিচয়ের বিরুদ্ধেও আঘাত। তিনি জানান, এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে মামলা হবে। তীর্থঙ্কর ভকতের নেতৃত্বে মেদিনীপুর আদালতের একাধিক আইনজীবী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে স্পষ্টভাবে লেখা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন আচরণ কোনওভাবেই দায় এড়াতে পারে না। একজন বা দু’জন অধ্যাপক শুধু নন, পুরো ব্যবস্থার মধ্যেই ছিল দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। চিঠিতে অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি তোলা হয়েছে। (আরও পড়ুন: সীমান্তে বাংলাদেশি অপরাধীদের হামলায় জখম বিএসএফ জওয়ান, আটক ২)
আরও পড়ুন: ভিনরাজ্যে আটক ৭৫০ পরিযায়ীর ভেরিফিকেশন করেছে রাজ্য, বিতর্কের মাঝে জানাল পুলিশ
উল্লেখ্য, প্রশ্নপত্রের ১২ নম্বর প্রশ্নে লেখা হয়েছে, ‘মেদিনীপুরের তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নাম কর, যারা সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা নিহত হন?’ এই শব্দচয়ন ঘিরেই বেঁধেছে তুমুল বিতর্ক। শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ-সহ জেলার বহু শিক্ষাপ্রেমী সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের একাংশের দাবি, প্রশ্নে ‘সন্ত্রাসবাদী’ শব্দ ব্যবহার করে প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামী ও শহিদদের অপমান করা হয়েছে। পরে উপাচার্য জানান, এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল, ইংরেজি থেকে অনুবাদের সময় অসতর্কতার কারণে এমনটি হয়েছে। তবে তারপরেও থামেনি সমালোচনার ঝড়। (আরও পড়ুন: কসবার কলেজের দেওয়ালে এখনও মোছা হয়নি 'মনোজিত দাদা আমাদের হৃদয়ে' গ্রাফিটি!)
আরও পড়ুন: কেন্দ্রের 'বিরোধিতা' করে ভ্রমণ পিপাসু বাঙালিদের বিতর্কিত বার্তা শুভেন্দুর
ইতিমধ্যেই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এই ইস্যুতে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিপ্লবী বিপল দাশগুপ্ত, প্রদ্যুৎ কুমার ভট্টাচার্য, শুভ্রাংশু পালের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সন্ত্রাসবাদী বলার দৃষ্টতা অমার্জনীয়। এর দায় নিতেই হবে মুখ্যমন্ত্রীকে, কারণ শিক্ষা দফতর তাঁর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে। তিনি উপাচার্যকে শোকজ করার দাবিও জানান।
জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি ডঃ শঙ্কর গুচ্ছাইত মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ইমেইলের মাধ্যমে পৃথকভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, এটা নিছক অনুবাদের ভুল নয়। এই প্রশ্নের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বদনাম করা হচ্ছে।