বিধানসভা ভোটের আগে নাগরিক পরিষেবায় জোর দিতে তৎপর কলকাতা পুরসভা। দক্ষিণ-পূর্ব কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পরিস্রুত পানীয় জলের জোগান নিশ্চিত করতে তৈরি হচ্ছে একাধিক অত্যাধুনিক জলপ্রকল্প। গড়ে তোলা হচ্ছে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট।
আরও পড়ুন: উদ্বোধনের কয়েক মাসের মধ্যেই গঙ্গাসাগরে বিকল ৭টি ওয়াটার ATM, চরম দুর্ভোগ
পুরসভা সূত্রের খবর, ধাপায় প্লান্টের পাশে আরও একটি নতুন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট ইউনিট গড়ে তোলা হচ্ছে। এর দৈনিক জল উৎপাদন ক্ষমতা থাকবে প্রায় ২০ মিলিয়ন গ্যালন। পাশাপাশি, গড়িয়া ঢালাই ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় আরেকটি জলপ্রকল্প নির্মাণের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। সেখানে প্রতিদিন উৎপাদন হবে আরও ১০ মিলিয়ন গ্যালন পরিস্রুত জল। পুর কর্তৃপক্ষের লক্ষ হল টালিগঞ্জ, যাদবপুর এবং ই এম বাইপাস লাগোয়া ওয়ার্ডগুলিতে ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভরতা কমিয়ে বাড়ি-বাড়ি পরিস্রুত জল পৌঁছে দেওয়া। সেই লক্ষ্যেই জোরকদমে তৈরি হচ্ছে একাধিক ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। ধাপায় বর্তমানে যে প্লান্ট চালু হয়েছে সেটি ৩০ মিলিয়ন গ্যালন ক্ষমতাসম্পন্ন। পুরসভার পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যেই ওই দু’টি নতুন জলপ্রকল্প চালু করে দেওয়া হবে।
কিন্তু শুধু জল উৎপাদন করলেই হবে না, তা পৌঁছে দিতে দরকার সঠিক পরিকাঠামো। তাই এই প্রকল্পগুলির সঙ্গেই শুরু হতে চলেছে বিশাল পাইপলাইন বসানোর কাজ। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৮৬ থেকে ৯০ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন পাতার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ধাপার নতুন প্রকল্প থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এবং গড়িয়ার প্লান্ট থেকে আরও ৩৬-৪০ কিলোমিটার পাইপ বসানো হবে।
এই পুরো প্রকল্পটির তদারকি করছে পুরসভার প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ। সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, পুরসভার লক্ষ্য দক্ষিণ কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে পরিস্রুত পানীয় জলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা। একে কেন্দ্র করে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা। এতে পরিবেশও রক্ষা পাবে, এবং নাগরিকরাও উপকৃত হবেন। তিনি আরও জানান, ধাপার নতুন প্লান্ট চালু হলে প্রায় ১৬০ থেকে ১৬৫টি গভীর নলকূপ বন্ধ করা যাবে। গড়িয়া প্রকল্প চালু হলে আরও প্রায় ১০০টি নলকূপ বন্ধের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে ভূগর্ভস্থ জলের উপর চাপ যেমন অনেকটাই কমবে, তেমনি পরিকাঠামোগত উন্নয়নও নতুন মাত্রা পাবে। এই প্রকল্পে সরাসরি উপকৃত হবেন টালিগঞ্জ, যাদবপুর, গড়িয়া, বাঁশদ্রোণী, আনন্দপুর, সায়েন্স সিটি সংলগ্ন অঞ্চল, এবং বাইপাস লাগোয়া বহু ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। ভোটের মুখে এই প্রকল্পে গতি আনা নিঃসন্দেহে একটি রাজনৈতিক বার্তা বলেই মনে করছেন অনেকেই।