বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ইতিহাস প্রশ্নপত্র ঘিরে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রশ্নপত্রে স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং শহীদদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনাকে ঘিরে সমালোচনায় সরব হয়েছে শিক্ষা মহল। তাদের অভিযোগ, এমন প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং শহীদদের অসম্মান করা হয়েছে। (আরও পড়ুন: দিল্লি গিয়েও মমতা বন্দনায় দিলীপ, 'দলত্যাগ' নিয়ে বিস্ফোরক প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি)
আরও পড়ুন: TMC ছাত্র পরিষদের ২ গোষ্ঠীর সংঘর্ষ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে, বন্ধ হল ফেস্ট
প্রশ্নপত্রের ১২ নম্বর প্রশ্নে লেখা হয়েছে, ‘মেদিনীপুরের তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নাম কর, যারা সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা নিহত হন?’ এই শব্দচয়ন ঘিরেই বেঁধেছে তুমুল বিতর্ক। শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ-সহ জেলার বহু শিক্ষাপ্রেমী সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের একাংশের দাবি, প্রশ্নে ‘সন্ত্রাসবাদী’ শব্দ ব্যবহার করে প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা সংগ্রামী ও শহিদদের অপমান করা হয়েছে। (আরও পড়ুন: কসবা ধর্ষণে অভিযুক্ত মনোজিতের 'অনুপ্রেরণা' গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই!)
আরও পড়ুন: বেজায় চটেছেন মহুয়া, এবার 'শ্বশুরবাড়ি' বয়কটের হুঁশিয়ারি মহুয়ার
তাঁরা মনে করছেন, প্রশ্নে যে তিন ব্রিটিশ জেলার ম্যাজিস্ট্রেটের কথা বলা হয়েছে, তাঁরা হলেন, ডগলাস (হত্যা: ১৯৩২), পেডি (১৯৩১) এবং বার্জ (১৯৩৩)। স্বাধীনতা আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাঁদের হত্যার ঘটনাগুলি ইতিহাসে স্বীকৃত। সেইসব অভিযান পরিচালনা করেছিলেন অনাথবন্ধু পাঁজা, মৃগেন্দ্রনাথ দত্ত, রামকৃষ্ণ রায়, নির্মলজীবন ঘোষ, প্রদ্যোৎকুমার ভট্টাচার্য, প্রভাংশু পাল, বিমল দাশগুপ্ত, জ্যোতিজীবন ঘোষ প্রমুখ বিপ্লবীরা।
অধিকাংশই ব্রিটিশ আদালতের রায়ে ফাঁসির দণ্ডে শহিদ হন বা পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তাঁদের স্মরণে আজও মেদিনীপুর শহরে একাধিক মূর্তি ও স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। এমনকি জেলা পরিষদ ভবন, যেখানে ডগলাসের হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল সেটিকে ‘হেরিটেজ’ ভবন ঘোষণার দাবিও দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন শহরের নাগরিকরা। এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্নপত্রে সন্ত্রাসবাদী শব্দের ব্যবহার প্রশ্ন তোলে স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল্যায়ন নিয়েও। প্রশ্নে কোথাও স্পষ্টভাবে ব্রিটিশ আমলের প্রশাসক বা তাঁদের অত্যাচারের প্রসঙ্গ তোলা হয়নি, যা বিতর্ককে আরও জটিল করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক নির্মল মাহাত বলেন, এই শব্দ উদ্ধৃতিচিহ্ন বা বন্ধনীর মধ্যে থাকার কথা। তা না হলে ছাপার ভুল বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। যদিও সেই ব্যাখ্যা বিতর্ককারীদের কাছে যথেষ্ট নয়, কারণ তাঁরা মনে করছেন, প্রশ্নের ভাষাই ভুল বার্তা দিচ্ছে,যেখানে শহিদদের সন্ত্রাসবাদী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
উল্লেখ্য, একই প্রশ্নপত্রে ইংরেজি মাধ্যমে ‘জঙ্গি জাতীয়তাবাদী’ শব্দও ব্যবহৃত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সব মিলিয়ে ইতিহাসের এমন প্রশ্নপত্রে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মূল্যায়ন ঘিরে উঠেছে নৈতিক ও শিক্ষাগত প্রশ্ন, যা নিয়ে জেলার শিক্ষা মহলে ও রাজনৈতিক মহলে প্রবল প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিপ্লবীদের সন্ত্রাসবাদি আখ্যা দেওয়ায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ’এখন ইংরেজ আমল নয়, স্বাধীন ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ইতিহাসের প্রশ্নপত্রে বিপ্লবীদের যেভাবে সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত আপত্তিজনক এবং দূরভিসন্ধিমূলক। ছাত্র-ছাত্রী এবং সমাজের কাছে এইসব স্মরণীয় বিপ্লবী চরিত্রকে কালিমালিপ্ত করার প্রয়াসকে ধিক্কার জানাই। অবিলম্বে ইতিহাস বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তরের পক্ষ থেকে ভুল স্বীকার করে প্রতিবাদ জানানো হোক। না হলে মনে করব ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজ করা হয়েছে। অবিলম্বে ভুল স্বীকার করে সর্বসমক্ষে বিবৃতি দাবি করছি।’