বয়সটা কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। সেই বয়সে চাকরির খোঁজে পাড়ি দিতে হয়েছিল অন্য রাজ্যে। কিন্তু অর্থের টান থাকলেও কখনও কখনও শিকড়ের টান বড় হয়ে ওঠে। এসিরুম, কমফোর্টেবল ডেস্ক, রিভলভিং চেয়ার বা ধরাবাঁধা সময়ের চাকরি সবসময় সেই টানের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে না। হয়ে উঠতে পারেনি ঋষভের কাছেও। বাইশ বছর বয়স, টগবগে রক্ত। কিন্তু ঝাঁ চকচকে নামকরা সংস্থায় যোগ দিয়েও কাজে মন বসছিল না। কারণটা কলকাতা। কল্লোলিনী তিলোত্তমা বড় পিছুটান। অবশেষে বাঁধা সময়ের বাঁধা দায়িত্বের আপাত সুখের চাকরিটি ছেড়ে দেন ঋষভ সাধুখাঁ। ফিরে আসেন নিজের শহরে। খুলে ফেলেন একটি খাবারের দোকানেরই ফ্র্যাঞ্চাইজি। নাম ‘সেভেন্থ হেভেন’ — সপ্তম স্বর্গ!
বাঙালির দুর্নাম ঘুচিয়ে…
বাঙালির বিবিধ দুর্নামের মধ্যে অন্যতম একটি হল বাঙালি ব্যবসা পারে না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই ধীরে ধীরে এই দুর্নাম ঘোচাতে সচেষ্ট হয়েছেন। ঋষভ তাঁদেরই অন্যতম। সাত বছর ধরে কলকাতার বুকে তাঁর ব্যবসা। একটি নয়, বর্তমানে দুটি আউটলেটের মালিক ঋষভ। প্রথমেই নিজের মূলধনে ব্যবসা শুরু করার সামর্থ্য ছিল না। ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিতে হয়েছিল। কিন্তু বাঙালির দুর্নাম ঘুচিয়ে সেই ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত লাভ ফের খাটিয়েছেন ব্যবসাতেই। খুলেছেন আরেকটি আউটলেট। প্রথম আউটলেটটি সল্টলেকে ছিল। পরেরটি খোলা হয় প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে। উত্তর-দক্ষিণ, তিলোত্তমার দুই প্রান্তের বাসিন্দারাই স্বাদ পান সপ্তম স্বর্গের!
আরও পড়ুন - HT Bangla Exclusive: বুড়ো হতে থাকা শহরকে বনস্পতির ছায়া দিচ্ছে অচেনা 'সন্তান'! বিষণ্ণ বিকেলে শরতের ছোঁয়া
কেন পছন্দ গ্রাহকদের?
ঋষভের কেক শপের খাদ্যতালিকায় মূলত রয়েছে নানা স্বাদের নানা ঘরানার কেক। একজন দুজন নয়, প্রায় দশজন শেফ এই কেক শপে। প্রতিনিয়ত কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী সুস্বাদু সব কেক তৈরি করে চলেছেন তাঁরা। ঋষভের কথায়, ‘এটাই আমাদের ইউএসপি। চোখের সামনে ওভেন থেকে নিজের কেক বেক হওয়া থেকে ডেকোরেশন সবটাই দেখতে পান একজন গ্রাহক। অন্য কেক শপগুলিতে এই ঘটনাটি বিরল। পাশাপাশি প্রতিটি কেক সম্পূর্ণ নিরামিষ। ফলে আমিষ না নিরামিষ, তা নিয়ে কারও কোনওরকম সমস্যার সম্ভাবনা নেই।’ কাস্টমারের চাহিদামতো বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে কাস্টমাইজড কেকও বানিয়ে থাকে ঋষভের কেক শপ। কেক বানানো একটা আর্টও বটে। ঋষভের কথায়, এই কারণে পুরো কাজটি এমনভাবে করা হয় যাতে গ্রাহকের খুব কাছের হয়ে ওঠে কেকটি। কাছের হয়ে ওঠে সেভেন্থ হেভেন। দীর্ঘ সাত বছরে এভাবেই ঋষভের কেক শপ কাছের হয়ে উঠেছে প্রায় পাঁচ হাজার গ্রাহকের।
আরও পড়ুন - Health News: পিঠের ঘায়ে কমছে হাঁটার শক্তি! মেরুদণ্ডের বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু, সারিয়ে তুলল কলকাতার হাসপাতাল
নস্টালজিয়ার বিনিময়ে স্বর্গ চেনানোর ভার!
লোন পেলেই ব্যবসার কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যায়, তা নয়। এর পরেও থাকে একটা বড়সড় খাটনি। বয়স অল্প হলেও খাটনির বিষয়টি এড়িয়ে যাননি ঋষভ। দোকানের জন্য প্লট ভাড়া নেওয়া থেকে নতুন ভাবনা দিয়ে সেই দোকান সাজানো। বিভিন্নরকম কেকের আইটেম তৈরি থেকে কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ, কাস্টমারদের দাবিদাওয়া মেটানো থেকে কাঁচামাল ও অন্যান্য জিনিসের জোগান নিয়ে ভাবতে ভাবতে সকাল গড়িয়ে রাত হয়। বারবার জিজ্ঞেস করলেও তাঁর একটাই কথা, ‘নিজের শহর নিয়ে অনেক নস্টালজিয়া। কলকাতায় কিছু করব। সেখান থেকেই এই পরিকল্পনা।’ ব্যবসা সাধারণত ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত মাথার উপর ভর করে থাকে। কিন্তু হাসিমুখেই হাজার চিন্তার ভার মাথা পেতে নিয়েছেন ঋষভ। নিয়েছেন অবশ্য কলকাতার নস্টালজিয়া ফিরে পাওয়ার বিনিময়ে। নিয়েছেন কলকাতাবাসীকে নতুন ‘স্বর্গ’ চেনানোর ভারও।