বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস প্রশ্নপত্রে বিপ্লবীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ উল্লেখ নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এবার বিষয়টি উঠল বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক স্তরে। শুক্রবার দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি) বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে। এর পর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, এ ধরনের ‘ভুল’ যাতে আর না ঘটে, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
আরও পড়ুন: বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বিতর্ক, CM’কে চিঠি আইনজীবীদের
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে বিষয়টি বৈঠকের এজেন্ডায় না থাকলেও, বৈঠকের মাঝপথে উচ্চশিক্ষা দফতরের প্রতিনিধি তথা সিনিয়র স্পেশাল সেক্রেটারি চন্দনী টুডু নিজে বিষয়টি উত্থাপন করেন। এরপর উপাচার্য দীপক কুমার কর তাঁর তরফে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। তিনি জানান, প্রশ্নপত্রে যেভাবে বিপ্লবীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলা হয়েছে, তা অনিচ্ছাকৃত হলেও দুঃখজনক। সেই দায় স্বীকার করে আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট অধ্যাপকদের দায়িত্ব থেকে সরিয়েও দেওয়া হয়েছে।
উপাচার্য বৈঠকে স্পষ্ট করে দেন, প্রশ্ন তৈরির সময় যে ধরনের শব্দ নির্বাচন হয়েছে, তা কোনওভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিভঙ্গি নয়। পাশাপাশি তিনি জানান, ভবিষ্যতে প্রশ্নপত্র তৈরির সময় যেন এই ধরনের বিভ্রান্তিকর বা বিতর্কিত শব্দ ব্যবহার না হয়, সে বিষয়ে সমস্ত বিভাগকে সচেতন থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে বুধবার ইতিহাস অনার্সের প্রশ্নপত্রে একটি প্রশ্নে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়া বিপ্লবীদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই শব্দচয়ন নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। ছাত্রমহল, শিক্ষক এবং ঐতিহাসিক মহলে এর তীব্র বিরোধিতা করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপক কর সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ‘ভুল’ স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চান।
প্রাথমিকভাবে পদচ্যুত করা হয় ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নির্মল মাহাতোকে। একই সঙ্গে প্রশ্নপত্র তৈরির সঙ্গে যুক্ত মডারেটর টিম থেকেও বাদ দেওয়া হয় অধ্যাপক প্রসেনজিৎ ঘোষকে। তবে এতসব উদ্যোগ সত্ত্বেও বিতর্কে ইতি পড়েনি। এই পরিস্থিতিতেই প্রায় দু’বছর পর শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসি বৈঠক ডাকা হয়। সেটি ছিল বর্তমান উপাচার্যের অধীনে প্রথম। রাত দশটা পর্যন্ত চলা এই বৈঠকে প্রশ্নপত্র বিতর্ক নিয়ে নানা স্তরের মত বিনিময় হয়। তবে কী কী আলোচনা হয়েছে, বা ভবিষ্যতের জন্য কী ধরনের সতর্কতা আরোপ করা হয়েছে তা নিয়ে মুখ খোলেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্ত কিশোর নন্দী জানান, অনেক বিষয় নিয়েই দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আপাতত সংবাদমাধ্যমে কিছু বলার নেই।