‘পুরো হিন্দু সমাজকে হিংসাবাজ বলার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর’, ‘তৃতীয়বার ব্যর্থ হওয়া রাহুল গান্ধী পুরো হিন্দু সমাজকে হিংসাত্মক বললেন’- সোমবার লোকসভায় রাহুল গান্ধীর ‘হিন্দু’ মন্তব্যের জেরে এরকমই ভাষায় সংসদের নিম্নকক্ষের বিরোধী দলনেতাকে আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। কিন্তু রাহুল কি সত্যিই সব হিন্দুদের ‘হিংসাবাজ’ বলেছেন? তিনি দাবি করেছেন যে মোটেও সব হিন্দুকে নিশানা করে সেই কথা বলেননি। বরং তিনি বিজেপি নেতাদের কথা বলেছেন। সেইসঙ্গে তিনি কড়া ভাষায় বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদী মানেই পুরো হিন্দু সমাজ নয়। বিজেপি মানেই পুরো হিন্দু সমাজ নয়। আরএসএস মানেই পুরো হিন্দু সমাজ নয়।’
রাহুল ঠিক কী বলেন?
সোমবার লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সামনে রাহুল বলেন, ‘ভারতের ইতিহাসে তিনটি আদর্শগত ভিত্তিপ্রস্তর আছে। একদিন ভাষণের সময় মোদীজি বলেছিলেন যে মোদীজি কারও উপর আক্রমণ করে না। সেটার কারণ আছে। কারণ এই দেশটা অহিংসার দেশ। এই দেশটা ভয় পাওয়ার দেশ নয়। আমাদের সব মহাপুরুষরা অহিংসার কথা বলেছেন। ভয় দূর করার কথা বলেছেন। কাউকে ভয় দেখিও না, কাউকে ভয় পেও না।’
সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অন্যদিকে শিবজি বলেন যে ভয় পেও না, ভয় দেখিও না। অভয় মুদ্রা দেখান। অহিংসার কথা বলেন। মাটিতে ত্রিশূল পুঁতে দেন। আর যে লোকেরা নিজেদের হিন্দু বলে, তারা ২৪ ঘণ্টা শুধু হিংসা-হিংসা করে। ঘৃণা, ঘৃণা, ঘৃণা (ছড়ায়)। অসত্য, অসত্য, অসত্য (কথা বলে)। আপনারা হিন্দুই নন। হিন্দু ধর্মে স্পষ্ট লেখা আছে যে সত্যের পথে চলতে হবে। সত্যের থেকে দূরে সরে গেলে চলবে না। সত্যকে ভয় পেলে চলবে না। অহিংসা আমাদের প্রতীক।’
রাহুলকে আক্রমণ মোদীর
সেই ‘হিন্দু’ মন্তব্য নিয়ে বিজেপি সাংসদদের হই-হট্টগোলের মধ্যেই উঠে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘পুরো হিন্দু সমাজকে হিংসাবাজ বলার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর।’ সেইসঙ্গে তিনি জানান, সংবিধান তাঁকে শিখিয়েছে যে বিরোধী দলনেতার কথা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। একইসুরে বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি সেলের প্রধান অমিত মালব্য বলেন, 'হিন্দুদের অপমান করেছেন রাহুল। এটা শুধু লজ্জাজনক ঘটনা নয়। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক।'
'মোদী মানেই পুরো হিন্দু সমাজ নয়'
প্রধানমন্ত্রীর কথা শেষ হওয়ার আগেই রাহুল বলতে থাকেন, ‘নেহি, নেহি (না, না)। বিজেপিকে বলেছি। আপনাকে বলেছি। নরেন্দ্র মোদী মানেই পুরো হিন্দু সমাজ নয়। বিজেপি মানেই পুরো হিন্দু সমাজ নয়। আরএসএস মানেই পুরো হিন্দু সমাজ নয়।’
এই প্রথম ‘হিন্দু’ বিতর্কে জড়ালেন না রাহুল
লোকসভা নির্বাচনের আগেই ‘শক্তি’ বিতর্কে জড়িয়েছিলেন রাহুল। সেইসময় তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লড়াই করছি না। এটা বোঝার দরকার আছে। ভারতে যুবক-যুবতীদের এই বিষয়টা বুঝতে হবে। কেউ-কেউ বলেন যে এঁরা সকলে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। না। আমরা এক ব্যক্তির বিরুদ্ধেও লড়াই করছি না। আমরা শুধু বিজেপির বিরুদ্ধেও লড়াই করছি না। একজন ব্যক্তিকে সামনে শুধু দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। হিন্দুধর্মে শক্তি বলে একটা শব্দ আছে। আমরা শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছি। একটি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছি।’
সেটার প্রেক্ষিতে রাহুলকে শানিয়েছিলেন মোদী। তিনি বলেছিলেন, ‘ইন্ডি জোট (বিরোধীদের জোট) নিজেদের ইস্তাহারে জানিয়েছে যে তাদের লড়াই হচ্ছে শক্তির বিরুদ্ধে। আমার কাছে প্রত্যেক মা হলেন শক্তির রূপ, প্রতিটি মেয়ে হলেন শক্তির রূপ। মা-বোনেরা আমি আপনাদের শক্তি রূপে পুজো করি। আমি ভারতমাতার পূজারি। আপনারা শক্তিস্বরূপা। আমি সব মা, বোন এবং মেয়েদেরও পূজারি। আর যাঁরা গতকাল শিবাজি পার্ক থেকে শক্তিকে ধ্বংস করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন, তাঁদের সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছি আমি। আর আমি এই শক্তিস্বরূপা মা-বোনেদের রক্ষার জন্য জীবনের পরোয়া করব না। জীবন উৎসর্গ করে দেব।’