ঘন জঙ্গল ৷ চারদিকে হিংস্র পশু আর বিষাক্ত সাপখোপের বাস ৷ তারমধ্যে একটি গুহার সামনে দড়িতে জামাকাপড় শুকোচ্ছে ৷ না আছে বিদ্যুৎ, না আছে জল, না আছে খাবারদাবার। কর্ণাটকের উত্তর কন্নড় জেলার কুমটা তালুকের রামতীর্থের এই জায়গা মানুষের থাকার অনুপযুক্ত ৷ এদিকে কাপড় সরিয়ে গুহায় ঢুকতেই চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের ৷ সেখানে দিব্য বাস করছেন এক মহিলা ও তাঁর দুই খুদে সন্তান ৷ ওই মহিলা রাশিয়ার নাগরিক৷
পুলিশ সূত্রে খবর, রুশ ওই মহিলার নাম নিনা কুতিনা ওরফে মোহি। তাঁর বয়স ৪০ বছর। দুই মেয়ে প্রেমা (৬ বছর ৭ মাস) এবং আমা (৪ বছর)-সহ ওই গুহার ভেতরে বসবাস করছিলেন তিনি। ব্যবসায়িক ভিসায় তিনি রাশিয়া থেকে ভারতে এসেছিলেন। এরপর গোয়া হয়ে কর্ণাটকের গোকর্ণ শহরে বসবাস শুরু করেন। এ সময় হিন্দু ধর্ম ও ভারতের আধ্যাত্মিক রীতিনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন নিনা।উত্তর কান্নাডার পুলিশ সুপার এম নারায়ণ বলেন, ‘এই মহিলা ও তাঁর সন্তানেরা কীভাবে জঙ্গলের মধ্যে ছিলেন এবং কী খেয়েছিলেন, তা বেশ বিস্ময়কর। সৌভাগ্যক্রমে জঙ্গলে থাকার সময় তাঁর বা শিশুদের কারও সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটেনি।’
আরও পড়ুন-অধ্যাপকের যৌন হেনস্তার প্রতিবাদে গায়ে আগুন! নির্যাতিতা ছাত্রীর মৃত্যু, হুলুস্থল ওড়িশায়
জানা গেছে, গুহার ভিতর ছিল শিবমূর্তি, হিন্দু দেব-দেবীর ছবি ও রাশিয়ান ধর্মীয় গ্রন্থ।নিনা প্রথমে গুহা ছাড়তে চাননি। কিন্তু ধস ও স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কায় শেষমেশ বেরিয়ে আসেন।পুলিশ জানায়, নিনা তাঁর সন্তানদের ছবি আঁকা, গান, যোগব্যায়াম ও জপ শেখাচ্ছিলেন। তাঁরা খাদ্য মজুত করতেন এবং শহরে ফোন চার্জ দিয়ে ফিরে আসতেন। উদ্ধারের পরে দুই শিশু আশ্রমে আলো, বিছানা দেখে খুশি।আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাঁদের রাশিয়ায় ফেরত পাঠানো হবে। এদিকে সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে রুশ মহিলা জানিয়েছেন, 'প্রকৃতিকে ভালবাসে তিনি বছরের পর বছর ধরে প্রায় ২০টি দেশের জঙ্গলে বসবাস করেছেন।' তিনি আরও বলেন, গুহার ভেতরে থাকাকালীন তার বা তার সন্তানদের জীবনের কোনও বিপদ ছিল না। নিনার কথায়, 'প্রকৃতির মধ্যে থাকার আমাদের অনেক অভিজ্ঞতা আছে। আমি আমার সন্তানদের জঙ্গলে মরতে আনিনি...তারা খুব আনন্দে ছিল।
গুহায় দুই মেয়ের সঙ্গে কীভাবে থাকতেন সে সম্পর্কে নিনা বলেন, 'আমরা জলপ্রপাতের জলে সাঁতার কাটতাম...আমার সন্তানরা ক্ষুধায় মারা যাচ্ছিল না...।' তবে ওই রুশ মহিলা অস্বীকার করেছেন যে তার ভিসার মেয়াদ ২০১৭ সালেই শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, তবে খুব বেশি দিন আগে নয়। তাঁর কথায়, 'আমাদের বৈধ ভিসা নেই ঠিকই। কিন্তু ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে কিচুদিন আগেই এবং ২০১৭ সালের পরে আমরা চারটি দেশে বরং করেছি। তারপর ফিরেও এসেছি।'
আরও পড়ুন-অধ্যাপকের যৌন হেনস্তার প্রতিবাদে গায়ে আগুন! নির্যাতিতা ছাত্রীর মৃত্যু, হুলুস্থল ওড়িশায়
প্রসঙ্গত, রামতীর্থ পাহাড়ের যেখানে গুহাটি অবস্থিত, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সেখানে একটি বড় ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছিল। এছাড়াও এই জায়গাটি বিষাক্ত সাপ-সহ বিপজ্জনক বন্যপ্রাণীদের আবাসস্থল।