ভারতের নানা মন্দিরেই রয়েছে 'ভিআইপি দর্শন' ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা বন্ধ করার দাবিতে মামলা রুজু করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। কিন্তু, বুধবার সেই মামলা খারিজ করে দিল শীর্ষ আদালত। যদিও আদালতের মতে, এই ধরনের কোনও ব্যবস্থা থাকা উচিত নয়। তারপরও এই ইস্যুতে কোনও ধরনের পদক্ষেপ করার বিষয়টি সরকার ও প্রশাসনের উপরেই ছেড়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
বিষয়টি নিয়ে একটি রিট পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল আদালতে। মামলাটি রুজু করা হয়েছিল প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে।
মামলাকারীর বক্তব্য ছিল, ভিআইপি দর্শনের মাধ্যমে মোটা টাকা ফি আদায় করে দেশের নানা প্রান্তে অবস্থিত মন্দিরগুলির কর্তৃপক্ষ। যা বন্ধ হওয়া দরকার বলে দাবি করেন মামলাকারী।
এর প্রেক্ষিতে বেঞ্চের পক্ষ থেকে যে অর্ডার ইস্যু করা হয়, তাতে বলা হয় - 'যদিও আমরা মনে করি, মন্দিরে ঢোকার ক্ষেত্রে কাউকেই বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু, তা সত্ত্বেও আমরা মনে করি যে ৩২ নম্বর ধারা অনুসারে, এই মামলা শোনাটা যথাযথ নয়। তবে, আমরা এই মামলা খারিজ করে দিচ্ছি মানে এটা নয় যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারবে না।'
দিন কয়েক আগেই প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ চলাকালীন এক ভয়াবহ পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে। সরকারিভাবে এখনও এই পর্যন্ত ঘটনায় কমপক্ষে ৩০ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হয়েছে। আহতের সংখ্য়া বলা হচ্ছে, ন্যূনতম ৬০।
এই ঘটনার পরই কুম্ভ মেলায় ঢোকার জন্য যত ভিআইপি পাস ছিল, সব বাতিল করে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার - যাতে আর এই ধরনের কোনও অঘটন না ঘটে। সেই প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্টে রুজু হওয়া মামলা এবং তা নিয়ে আদালতের অবস্থান ও পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।
এই মামলার শুনানি চলাকালীন মামলাকারীর আইনজীবী রাজ্য সরকারগুলির কাছে অনুরোধ করেন, যাতে মন্দিরে দর্শনের ক্ষেত্রে তারা একটি 'স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর' (এসওপি) তৈরি করে।
মামলাকারীর আইনজীবীর আরও বক্তব্য ছিল, ভিআইপি দর্শন-এর মতো ব্যবস্থাপনা আদতে সমাজের মুষ্টিমেয় কিছু প্রভাবশালী ও ধনী মানুষকে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেয়। বদলে বাকি সকলের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। যা আদতে সাম্যের আদর্শের পরিপন্থী। শুধু তাই নয়। এই ধরনের অসাম্য পদপিষ্টের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অসংখ্য মানুষের জীবনের অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নেয়।
যদিও প্রধান বিচারপতি বলেন, এক্ষেত্রে আসল বিষয়টি হল আইন-শৃঙ্খলা। যদি সেটি সঠিকভাবে রক্ষা করা যায়, তাহলে সমস্যা এড়ানো সম্ভব। তাই এক্ষেত্রেও মূলত সেই দিকেই সকলের নজর থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি। প্রসঙ্গত, এই মামলাটি যিনি রুজু করেছিলেন, তাঁর নাম বিজয় কিশোর গোস্বামী।