যেন ‘টিকটিক করতে থাকা জল বোমার মতো’, এই ভাষাতেই সীমান্তের কাছে চিনের মেগা বাঁধ প্রজেক্ট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু। পিটিআই-র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি চিনের ইয়ারলুং সাংপো নদীর উপর বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ প্রকল্পটি নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য, ব্রহ্মপুত্র নদীর তিব্বতি নাম ইয়ারলুং সাংপো। কেন এই বাঁধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী? এই বাঁধ ঘিরে কোন আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে?
সাক্ষাৎকারে অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু বলেন,'বিষয়টি হল চিনকে বিশ্বাস করা যায় না। কেউ জানে না তারা কী করতে পারে।' তাঁর এমন উদ্বেগের নেপথ্যে রয়েছে বেশ কিছু তথ্য। চিন আন্তর্জাতিক জল চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী নয় যা তাকে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করতে পারত। ফলত চিন এই বাঁধ ঘিরে কী করতে পারে, তা নিয়ে রয়েছে আশঙ্কা। পেমা খান্ডু ওই সাক্ষাৎকারে বলেন,চিন যদি আন্তর্জাতিক জলবণ্টন চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী হত, তাহলে এই প্রকল্পটি আশীর্বাদ হতে পারত কারণ এটি অরুণাচল প্রদেশ, আসাম এবং বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন বন্যা রোধ করত। তিনি বলেন,'কিন্তু চিন স্বাক্ষরকারী নয় (আন্তর্জাতিক জলচুক্তিতে), এবং এটাই সমস্যা... ধরুন বাঁধটি তৈরি হয়ে গেলে এবং তারা হঠাৎ করে জল ছেড়ে দেয়, তাহলে আমাদের পুরো সিয়াং বেল্ট ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশেষ করে, আদি উপজাতি এবং অনুরূপ গোষ্ঠীগুলি... তাদের সমস্ত সম্পত্তি, জমি এবং বিশেষ করে মানবজীবন ধ্বংসাত্মক প্রভাবের সম্মুখীন হবে।' উদ্বেগ পেশ করে তিনি বলেন,'চিনের সামরিক হুমকি বাদ দিলে, আমার মনে হয় এটি অন্য যেকোনও কিছুর চেয়ে অনেক বড় সমস্যা। এটি আমাদের উপজাতি এবং আমাদের জীবিকার জন্য অস্তিত্বের জন্য হুমকি তৈরি করতে চলেছে। এটি বেশ গুরুতর কারণ চিন এটিকে এক ধরণের 'জল বোমা' হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে।'
ভারত নিয়েছে কোন পদক্ষেপ?
চিনের এই মেগা বাঁধ প্রজেক্ট ঘিরে ভারতও পাল্টা প্রতিরক্ষার ময়দানে নেমেছে। অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী পিটিআইকে বলেন, ভারত সরকারের সাথে আলোচনার পর রাজ্য সরকারের সিয়াং আপার মাল্টিপারপাস প্রজেক্ট নামে একটি প্রকল্প রয়েছে, যা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে এবং জল সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। তবে আশঙ্কার সুরে পেমা খান্ডু বলেন,'আমি বিশ্বাস করি চিন হয় তাদের পক্ষে কাজ শুরু করতে চলেছে অথবা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু তারা কোনও তথ্য ভাগ করে না। দীর্ঘমেয়াদে, যদি বাঁধটি সম্পন্ন হয়, তাহলে আমাদের সিয়াং এবং ব্রহ্মপুত্র নদীগুলি যথেষ্ট শুকিয়ে যেতে পারে।' খান্ডু আরও যোগ করেন যে, ভবিষ্যতে চিন যদি জল ছেড়ে দেয়, তাহলে অবশ্যই বন্যা হবে, তবে তা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।