ভাঙড়ে তৃণমূল নেতা রেজ্জাক খানের খুনকে ঘিরে নতুন মোড় নিচ্ছে তদন্ত। এবার এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দলেরই দুই কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, ওই দু’জন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটে সেই তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পরই তাঁদের আটক করা হয়েছে। সূত্রের খবর, গুলি চলার সময় বাইকে বাড়ি ফিরছিলেন রেজ্জাক, সঙ্গে ছিলেন তাঁর ওই দুই সহযোগী। আততায়ীরা গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। রেজ্জাকের শরীরে গুলি লাগে এবং চোখ-মুখে ধারালো অস্ত্রের আঘাতেরও চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে চারটি খালি কার্তুজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। (আরও পড়ুন: কেন্দ্রের 'বিরোধিতা' করে ভ্রমণ পিপাসু বাঙালিদের বিতর্কিত বার্তা শুভেন্দুর)
আরও পড়ুন: শওকত মোল্লা ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা খুন, আঙুল সরাসরি ভাঙড়ের বিধয়াকের দিকে
এই খুনের পরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ভাঙড় জুড়ে। ভোটের মুখে এই ঘটনার জেরে উদ্বিগ্ন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অনেকেরই ধারণা, এই খুনের পেছনে রয়েছে শাসক দলেরই অন্তর্দ্বন্দ্ব। অনেকেই সরাসরি আঙুল তুলছেন তৃণমূলের দুই হেভিওয়েট নেতা শওকত মোল্লা এবং আরাবুল ইসলামের দিকেই। একসময় আরাবুল-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন রেজ্জাক। নিজেও সে কথা মেনে নিয়েছেন প্রাক্তন নেতা আরাবুল, যিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, রেজ্জাক ছিলেন তাঁর ছায়াসঙ্গী। তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না এভাবে হারাতে হবে তাঁকে। (আরও পড়ুন: কসবার কলেজের দেওয়ালে এখনও মোছা হয়নি 'মনোজিত দাদা আমাদের হৃদয়ে' গ্রাফিটি!)
আরও পড়ুন: 'ভুল' বুঝতে পারল ওড়িশা, বাংলাদেশি ভেবে আটক ৪০৩ বাঙালিকে মুক্তি
উল্লেখ্য, ভাঙড়ের রাজনীতিতে শওকত-আরাবুল দ্বন্দ্ব নতুন নয়। এক সময় আরাবুলের দাপট থাকলেও, গত কয়েক বছরে সেই জায়গা দখল করেছেন শওকত। ২০১১ সালে সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েই শওকত ধীরে ধীরে দলে নিজের জায়গা শক্ত করেন। অন্যদিকে, নানা বিতর্ক এবং দলবিরোধী কাজের অভিযোগে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়েন আরাবুল। শেষ পর্যন্ত গত বছর তাঁকে আবারও সাসপেন্ড করে দল। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল আরও প্রকাশ্যে আসে। ২০১৬-তে রেজ্জাককে প্রার্থী করায় আরাবুলের রাজনৈতিক অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। এমনকি ২০২৩-এর পঞ্চায়েত ভোটেও তিনি জিতলেও আগের মতো দাপট আর ছিল না। এরপর তাঁকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। (আরও পড়ুন: সীমান্তে বাংলাদেশি অপরাধীদের হামলায় জখম বিএসএফ জওয়ান, আটক ২)
আরও পড়ুন: IIM কলকাতায় হস্টেলে ধর্ষণ তরুণীকে, গ্রেফতার অভিযুক্ত ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়া
শওকত যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আইএসএফ-এর দুষ্কৃতীরাই রেজ্জাককে গুলি করে খুন করেছে। তবে এই দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। তাঁর দাবি, রেজ্জাকের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ভালই ছিল। এই ঘটনা তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফসল। শওকত এখন রাজনৈতিক সুযোগ নিচ্ছেন।এই অবস্থায় রেজ্জাক খানের খুনের পিছনে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক টানাপোড়েন, দলীয় কোন্দল এবং ক্ষমতার লড়াই রয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের অনেকে।