কলকাতার প্রাচীন দোল উৎসবগুলির মধ্যে যে উৎসবটির কথা না বললেই নয়, সেটি শোভাবাজার রাজবাড়ির দোল। তখন রাজা নবকৃষ্ণ দেবের আমল। আজ থেকে প্রায় তিনশো বছর আগে ১৭৬৬ খ্রিষ্টাব্দে রাজপ্রাসাদের ঠাকুরদালানে শ্রীশ্রী গোবিন্দ জিউর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন থেকেই প্রচলিত রয়েছে দোল উৎসবের রীতি। প্রতি বছরই মহাসমারোহে এই উৎসব পালন করা হয়ে আসছে।
দোলের আগের দিন বহ্নি উৎসব
দোলের আগের দিন সারা দেশেই পালিত হয় চাঁচর অর্থাৎ নেড়া পোড়া উৎসব। উৎসবটির আরেক নাম অবশ্য বহ্ন্যুৎসব। পুরাণমতে মনে করা হয়, এটি শ্রীবিষ্ণুর অসুর দলনের বিজয়োৎসবের প্রতীক। শোভাবাজার রাজবাড়িতে অবশ্য চাঁচর উৎসব পরিচিত দৃশ্যের থেকে কিছুটা আলাদা। এখানে একটি বাঁশকে খড়ের আঁটি দিয়ে মুড়ে মিনারের মতো বানিয়ে মাটিতে পোঁতা হয়। সন্ধে হলে প্রথমে শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দজির পুজো, আরতি ও হোম অনুষ্ঠান করা হয়। এর পর হোমের জ্বলন্ত কাঠ দিয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করতে করতে চাঁচরে আগুন ধরানো হয়।
আরও পড়ুন - গোপীনাথকে রং দিয়ে শুরু হয় আবির খেলা, দশঘরায় ৩০০ বছর ধরে রয়েছে এক বিশেষ রীতি
জল, যব ও দূর্বা দিয়ে স্নান
দোলের দিন সকালে হয় শোভাবাজার রাজবাড়িতে প্রচলিত রয়েছে দেবদোল বা নারায়ণের দোল। অর্থাৎ প্রথমে দেবতারা দোল খেলেন। সকাল সকাল সেরে ফেলা হয় দোলের পুজো। এর পর নারায়ণকে আবির দেওয়ার রীতি। আবিরে ভূষিত নারায়ণের অভিষেক হয় তার পর। এই সময় বিভিন্ন তীর্থ থেকে সংগ্রহ করে আনা পবিত্র জল, যব ও দূর্বা দিয়ে স্নান করানো হয় তাঁকে। স্নান প্রক্রিয়া শেষে রাধাগোবিন্দজিকে দোলনায় দোলানো হয়।
আরও পড়ুন - দেবতারা আবির খেলেন বাংলার এই গ্রামে! নারায়ণ শিলা সাক্ষী রেখে শুরু হয় দোল উৎসব
মতিচুর, দরবেশ, পান্তুয়ার ভোগ
দোল উপলক্ষে বিশেষ ভোগ দেওয়ার রীতি প্রচলিত দীর্ঘদিন ধরেই। এই দিন মতিচুর, দরবেশ, পান্তুয়া, মিষ্টি গজা, নোনতা গজা ও খাস্তা কচুরির ভোগ গোবিন্দজিকে নিবেদন করা হয়। ভোগের পর রাধাগোবিন্দজিকে আবির দেওয়া হয়। এভাবেই শুরু হয় দোল খেলা। খেলা শেষ হলে শ্রীশ্রীরাধাগোবিন্দজির অভিষেক বা স্নান হয়। বিগ্রহের গায়ের আবির তখন সেবায়েতদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। পরিবারের সবাই সেই আবির মাথায় নিয়ে শ্রীশ্রীরাধাগোবিন্দজিকে প্রণাম করে সমাপন করেন দোল খেলার।