কথিত আছে, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। দুর্গাপুজো, কালীপুজোর মতো বড়সড় পার্বণ না হলেও দোল উৎসব নেহাত ছোট পার্বণও নয়। ঐতিহ্যের বিস্তারে ও উদযাপনের সমারোহে বেশ জাঁকজমকপূর্ণ বাঙালির এই বসন্ত উৎসব। গোটা বাংলাজুড়ে সেই রঙিন ইতিহাস বিস্তৃত। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল ও রাজবাড়িতে বহু দিন ধরেই প্রচলিত রয়েছে দোল উৎসবের রীতি। যেমন ধরা যাক হুগলি জেলার দশঘরার বিশ্বাস পরিবারের দোল উৎসবের কাহিনি।
দশঘরা গ্রামের দোল উৎসব
হুগলির তারকেশ্বরের কাছেই এক প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী গ্রাম দশঘরা। এই দশঘরার বিশ্বাস পাড়াতেই রয়েছে এককালের জমিদার বিশ্বাস পরিবারের জমিদারবাড়ি। পাড়ার আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নান জমিদারি কীর্তিও। যেমন গোপীসাগর দিঘির পাড়ে গেলে দেখা মিলবে বিশ্বাস পরিবারের কাছারি বাড়ি, নহবত খানার। আবার একটু দূরেই অবস্থিত প্রাচীন শিবমন্দির, রাসমঞ্চ, দোলমঞ্চ। অসামান্য টেরাকোটার কাজ খচিত রয়েছে এখানের পঞ্চরত্ন গোপীনাথ জিউর মন্দিরের অঙ্গে।
আরও পড়ুন - দেবতারা আবির খেলেন বাংলার এই গ্রামে! নারায়ণ শিলা সাক্ষী রেখে শুরু হয় দোল উৎসব
৩০০ বছর পুরনো রীতি
প্রায় তিনশো বছর আগে ১৭২৯ খ্রিস্টাব্দে সদানন্দ বিশ্বাস এই মন্দির নির্মাণ করে গোপীনাথ জিউয়ের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকে আজও প্রতি দোল পূর্ণিমায় গোপীনাথ জিউয়ের দোল উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে। অন্যান্য অঞ্চলের মতোই এখানেও দোলের আগের দিন অনুষ্ঠিত হয় চাঁচর বা ন্যাড়া পোড়া।
আরও পড়ুন - বাতাসা লুট থেকে লুচির ভোগ! ৪০০ বছর ধরে বর্ণাঢ্য দোল সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারে
গোপীনাথকে আবির নিবেদন
দোলের দিন সকাল সকাল দোলমঞ্চে নিয়ে আসা হয় গোপীনাথ জিউয়ের বিগ্রহ। মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয় তার পুজো। এর পর তাকে আবির নিবেদন করেন পরিবারের সকলে এবং গ্রামের মানুষরা। গোপীনাথ জিউকে আবির নিবেদনের মধ্যে দিয়েই শুরু হয়ে যায় দোল উৎসব। গোপীনাথ সাক্ষী থাকেন গোটা গ্রামের আনন্দঘধ মুহূর্তের। আবিরের রঙে রাঙা হয়ে ওঠে দোলমঞ্চ সংলগ্ন মাঠ ও গোপীসাগর দিঘি। দোল খেলা শেষ হলে দোলমঞ্চ থেকে মন্দিরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় গোপীনাথ জিউকে। সেখানে প্রথমে নতুন পোশাকে সাজানো হয় বিগ্রহ। এরপর নিবেদন করা হয় বিশেষ ভোগ। ভোগ নিবেদনের মধ্যে দিয়ে সমাপ্তি হয় দোল উৎসবের।