সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপুজোর কথা অনেকেই জানেন। কিন্তু এই একই পরিবারে দোলের দিন মহাসমারোহে পূজিত হন গৃহদেবতা রাধাকান্ত। তাঁকে রং দিয়ে এই দিন শুরু হয় আবির খেলা। শুধু পরিবারের সকলে নন, স্থানীয় মানুষরাও যোগ দেন বড়িশার এই ঐতিহ্যবাহী দোলযাত্রায়।
৪০০ আগে যেভাবে শুরু
জানা যায়, ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে মান সিংহের কাছ থেকে তৎকালীন সুতানুটি, কলকাতা ও গোবিন্দপুরের জমিদার লক্ষ্মীকান্ত গঙ্গোপাধ্যায় (অনেকের মতে মজুমদার) ৮ খানা নিষ্কর পরগনা লাভ করে বড়িশায় বসবাস শুরু করেছিলেন। তিনিই সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের আদিপুরুষ। ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্মীকান্ত আটচালার দুর্গামণ্ডপে দুর্গাপুজো শুরু করেন। কলকাতার বুকে সেই প্রথম দুর্গাপুজো শুরু। এই আটচালার পাশেই রয়েছে একটি দালান রীতির মন্দির। সেখানেই অধিষ্ঠিত সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের গৃহদেবতা রাধাকান্ত। চারশো বছর ধরে দুর্গাপুজোর পাশাপাশি এই দালানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দোল উৎসবও।
আরও পড়ুন - গাছে ঢিল বাঁধলে ইচ্ছে পূরণ করেন সতী মা, দোলে ভিড় নাকি ছাপিয়ে যায় গঙ্গাসাগরকেও
দোলের আগের দিন চাঁচর উৎসব
দোলের আগের দিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে যায় প্রস্ততি। রায়চৌধুরী পরিবারের চণ্ডী মন্দিরের সামনের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় চাঁচর বা ন্যাড়াপোড়া। ওইদিন মাঠে নিয়ে আসা হয় মন্দিরের নারায়ণ শিলা। চাঁচর উৎসবের সাক্ষী থাকেন নারায়ণ। দোলের দিন ভোর ভোর নামগান করতে করতে দোলনা করে রাধাকান্তকে তাঁর মন্দির থেকে দ্বাদশ শিব মন্দিরের মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। মন্দিরের শিব, গোপাল, নারায়ণ ও অন্যান্য দেবদেবীরাও রাধাকান্তের সঙ্গে গমন করেন।
আরও পড়ুন - দোল উৎসবে মন্দিরে ফেরেন গোকুলচাঁদ, বাঁকুড়ার গুপ্ত বৃন্দাবনে শুরু হয় রঙের খেলা
বাতাসা ও মঠের লুট
ওই ভাবেই সারাদিন ধরে রাধাকান্তের পুজোপাঠ সম্পাদিত হয়। পুজোশেষে দেওয়া হয় বাতাসা ও মঠের লুট। গৃহদেবতার বিগ্রহে আবির দেন সকলে। রাধাকান্তকে আবির মাখিয়েই শুরু হয় দোল উদযাপন। আবির খেলা শেষ হলে আটচালার দুর্গাদালানে রাধাকান্তকে নিয়ে আসা হয়। সেখানে হলুদ, ঘি, মধু, চন্দন ইত্যাদি লেপন করে গৃহদেবতাকে স্নান করান পরিবারের সদস্যরা। স্নানের পর মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয় রাধাকান্তকে। এরপর লুচি, পাঁচ ধরনের ভাজা ও মিষ্টি দিয়ে বিশেষ ভোগ নিবেদন করা হয়। যেহেতু দোলের দিন পূর্ণিমা, তাই ওই দিন অন্নভোগ দেওয়ার রীতি নেই। পরদিন সকালে রাধাকান্তকে অন্নভোগ দেওয়া হয়।