বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাদুঘর তৈরি হতে চলেছে ভারতে। প্রধানমন্ত্রী নয়া দিল্লির প্রগতি ময়দানে ৪৭তম আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস উপলক্ষে আসন্ন জাতীয় জাদুঘরের ভার্চুয়াল ওয়াক উদ্বোধন করেন। এই জাদুঘরের নাম হতে চলেছে ‘যুগে যুগেন ভারত’।
জানা গিয়েছে, ১ লাখ ১৭ হাজার বর্গমিটার আয়তনে তৈরি হবে এই জাদুঘর। এই জাদুঘরে দেশের ৫০০০ বছরের ইতিহাস ধরা থাকবে ৯৫০টি কক্ষে। এখানে সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে। ভারতে পাহাড়,সমুদ্র,গাছ এবং নদীকে পূজা করা হত এক সময়ে। জাদুঘরে ইতিহাসের যাত্রা শুরু হবে সেই সময় থেকে। থাকছে বেদ, উপনিষদ যুগের কথাও।
মৌর্য সাম্রাজ্যের উত্থান ও বিস্তারের পাশাপাশি সাতবাহন, পল্লব ও কুষাণ,গুপ্ত রাজবংশ, রাষ্ট্রকূট,চালুক্য, চেরা,পান্ড্য রাজবংশ এবং কাশ্মীরের শাসকদের স্বর্ণযুগ ইত্যাদি এখানে থাকছে। মধ্য যুগের ভারতেরাজপুতদের কথার সঙ্গে সুলতানি ও মুঘল যুগের ইতিহাসও সংকলিত হচ্ছে এখানে। চৌহান,প্রতিহার,পারমার, সোলাঙ্কি,সিসোদিয়া এবং রাজপুত রাজাদের বীরত্বগাথাই শুধু বিখ্যাত নয়,তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় শিল্প,নৈপুণ্য ও সংস্কৃতিরও অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটেছিল। জাদুঘরে এ সংক্রান্ত তথ্যও পাওয়া যাবে।
রাজপুত,মারাঠা এবং মুঘল শাসকদের যুগে,হোয়সালা, যাদব,মারাঠা শাসকদের ইতিহাসও এখানে দেখা যাবে। উত্তর-পূর্ব ভারতে আহোম শাসনের সমৃদ্ধ স্থাপত্য এবং দক্ষিণে বিজয়নগর সাম্রাজ্য। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ভারতে বাণিজ্য করার অনুমতি দেওয়ার সময় পরিবর্তনের সময়কাল সম্পর্কে আরও তথ্য দেওয়া হবে।
মিউজিয়ামের পঞ্চম জোন দেখতে পাওয়া যাবে কীভাবে পলাশি ও বক্সারের যুদ্ধের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শাসনের বিস্তার শুরু হয়েছিল। ১৭৬০ সাল থেকে দেশে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এমন একটি মোর্চা নিয়েছিল,যা কোম্পানি ৪০ বছর ধরে দমাতে পারেনি এবং ১৮৫৭ সালের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের পর প্রতিটি শ্রেণীর মানুষ স্বাধীনতায় অংশগ্রহণ করেন। নিজেদের মতো করে সংগ্রাম করেন তাঁরা। প্রায় ২ শতাব্দী দীর্ঘ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের গল্প এখানে সংকলিত হবে।
এখানেই শেষ নয়। স্বাধীন ভারতে কীভাবে সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছিল, সে সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে এখানে। তাছাড়া আধুনিক ভারতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কীভাবে নতুন উচ্চতা অতিক্রম করছে, নতুন দিকনির্দেশনায় নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গে এগিয়েছে, দেশকে নিরাপদ করতে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রচেষ্টা চলছে— সে সম্পর্কেও তথ্য থাকছে এই জাদুঘরে। আরও পরে এসে ডিজিটাল শক্তির বিকাশ,চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনন্য অবদান,দিনে দিনে অর্থনৈতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ,শিক্ষার উন্নতি ও প্রসার এই সবই থাকছে মিউজিয়ামে।
বিশ্বের বৃহত্তম জাদুঘর ভারতের অতীত থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত সেই সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনা,ব্যক্তিত্ব, ধারণা এবং অর্জনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে,যা নতুন ভারত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।