তাঁর দাবি, তিনি নাকি প্রাক্তন রঞ্জি খেলোয়াড়। একটা সময় অন্ধ্রপ্রদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলতেন। আবার সেই একই ব্যক্তি মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডুর আপ্তসহায়ক পেনড্যালা শ্রীনিবাস রাওয়ের ছদ্মবেশ ধরেন!
অভিযোগ, এভাবেই নানা রূপে নানা প্রদেশে প্রতারণার জাল বিছিয়ে শিকারকে ফাঁদে ফেলতেন বুদুমুরু নাগারাজু। যার জন্য বহুবার তাঁকে গ্রেফতার হতে হয়েছে। আর এবার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল বিজয়ওয়াড়ার সাইবার ক্রাইম পুলিশ। অভিযোগকারী স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর আপ্তসহায়ক।
সূত্রের দাবি, নাগারাজু একটি হোয়াট্সঅ্য়াপ নম্বর ব্যবহার করতেন। যার প্রোফাইল পিকচারে তাঁর নিজের ছবি ছিল না। বদলে ছিল, মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর আপ্তসহায়কের ছবি।
অভিযোগ, ওই নম্বর ব্যবহার করেই বিভিন্ন ধনী ব্যক্তি ও সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন তিনি। তারপর সেইসব জায়গা থেকে মোটা টাকা আদায় করতেন।
যাঁরা টাকা দিতেন, তাঁদের তিনি নিজের পরিচয় পেনড্যালা শ্রীনিবাস রাও হিসাবেই দিতেন। এবং বলতেন, এই টাকা নাকি ক্রিকেটার রিকি ভুঁইয়াকে স্পনসর করতে ব্যবহার করা হবে।
প্রসঙ্গত, নাগারাজু যে এই প্রথম খবরে এলেন, তা নয়। এর আগেও প্রতারণার ঘটনায় নাম জড়িয়েছে তাঁর। যার জেরে গত জুলাই মাসেও তাঁকে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হতে হয়েছিল। কিন্তু, তারপরও শোধরাননি ওই ব্যক্তি। দিব্য়ি চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের প্রতারণার কারবার।
যার জেরে বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর আপ্তসহায়ক স্বয়ং নাগারাজুর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই মামলা গ্রহণ করেছে বিজয়ওয়াড়ার সাইবার ক্রাইম পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগেও বহুবার নাগারাজুর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছে। ২০১৯ সালের মে মাসে বিজয়ওয়াড়া পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। সেই সময় তিনি বিসিসিআই-এর মুখ্য নির্বাচক এমএসকে প্রসাদের ছদ্মবেশে বহু মানুষকে ঠকিয়ে তাঁদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছিলেন তিনি।
সেই ঘটনার তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, নাগারাজু কোনও সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেন না। তাঁর নিশানায় সবসময়েই থাকতেন ধনীরা। যাঁদের অধিকাংশই বড় ব্যবসায়ী।
তাঁদের নাগারাজু একটি বিশেষ টোপ দিতেন। তা হল - ওই ব্যবসায়ীরা যদি রাজি থাকেন, তাহলে তাঁরা বিশাখাপত্তনমে একটি ক্রিকেট অ্যাকাডেমি গড়ে তোলার প্রকল্পে স্পনসর করতে পারেন। ব্যবসায়ীরা নিজেদের পণ্য ও সংস্থার প্রচারের লোভে টাকা দিলেই তা সরাসরি চলে যেত নাগারাজুর পকেটে।
বিজয়ওয়াড়ার তৎকালীন এসিপি (সেন্ট্রাল) ওয়াই অঙ্গিনীডু প্রসাদ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে এন গোপাল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা করেন নাগারাজু। তাঁকে তিনি বলেছিলেন, তিনি নাকি বিশাখাপত্তনমে মহেন্দ্র সিং ধোনির জন্য ক্রিকেট অ্য়াকাডেমি তৈরি করছেন!
তথ্য বলছে, এর আগে বহুবার পুলিশের জালে ধরা পড়েছেন, গ্রেফতার হয়েছেন নাগারাজু। কিন্তু, জামিন পেতেই আবারও পুরোনো পেশায় ফিরে গিয়েছেন।
পুলিশের কাছে একবার জেরায় নাগারাজু জানিয়েছিলেন, তিনি জেনে-বুঝেই এই প্রতারণাগুলি করেন। তাঁর দাবি, তিনি নিজে একজন সফল ক্রিকেটার হতে পারতেন। কিন্তু, অন্ধ্রপ্রদেশের কোনও এক নেতা নাকি তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করে ১৫ লক্ষ টাকা ঠকিয়ে নিয়েছিলেন।
নাগারাজুর দাবি, সেই প্রতারণার বদল নিতেই তিনি অন্যদের সঙ্গে পালটা প্রতারণা করেন!