দীর্ঘদিন ধরেই জল্পনা আর আলোচনা চলছিল যে - আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগেই বিহার রাজ্য মন্ত্রিসভার বহর বাড়াতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। সেই জল্পনার অবসান হয়ে গেল আজই (বুধবার - ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫)। এদিন নীতীশ কুমার মন্ত্রিসভার সদস্য হিসাবে শপথগ্রহণ করলেন আরও সাতজন।
এই ঘটনাকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ, হিসাব মতো চলতি বছরের অক্টোবর কিংবা নভেম্বর মাসেই বিহার বিধানসভার পরবর্তী নির্বাচন হবে। তাছাড়া, এমাসের ২৮ তারিখেই (আগামী শুক্রবার) শুরু হবে বিধানসভার বাজেট অধিবেশন। তা ঠিক দু'দিন আগে বাড়ানো হল রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা।
এদিন যাঁরা মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন, সেই দলে রয়েছেন - সঞ্জয় সারাওগি, সুনীল কুমার, জীবেশ মিশ্র, মোতিলাল প্রসাদ, কৃষ্ণ কুমার মান্টু, রাজু কুমার সিং এবং বিজয় কুমার মণ্ডল। এদিন নিয়ম মাফিক রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান এই সাত বিধায়ককে মন্ত্রী পদে শপথবাক্য পাঠ করান।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল - এই সাতজনই বিজেপি বিধায়ক। যার জেরে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি বিহার সরকারে বিজেপির প্রভাব বৃদ্ধি করতেই এই সাতজনকে এমন একটা সময়ে বিধায়ক থেকে সটান মন্ত্রী করে দেওয়া হল?
তাছাড়া, এর আগেই বিহারের রাজস্ব মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বিহার বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ জয়সওয়াল। তিনি জানান, দলের নিয়ম মেনে 'এক ব্যক্তি, এক পদ' নীতি পালন করতেই এই পদক্ষেপ করলেন তিনি।
ইস্তফা দেওয়ার ঠিক আগে এই প্রসঙ্গে দিলীপকে বলতে শোনা যায়, 'আমি রাজস্ব মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে চলেছি। আমাদের দল - এক ব্যক্তি, এক পদ - নীতি মেনে চলে। আমাকে দলের রাজ্য শাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর জন্য আমি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে কৃতজ্ঞ।'
অন্যদিকে, এদিন সাত বিজেপি বিধায়কের মন্ত্রী পদে শপথ নেওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে বিহারে শাসনক্ষমতা ধরে রাখতে এনডিএ যে মরিয়া, সেকথা কারও অজানা নয়।
কিন্তু, আগামী ভোটের পরও কি নীতীশ বা তাঁর দলকেই কি রাজ্যে এনডিএ-র প্রধান নেতা বা শরিক হিসাবে দেখতে চায় বিজেপি? নাকি তাদের ভাবনা-চিন্তা অন্য?
এমন একটা প্রেক্ষাপটে একদিকে দিলীপ জয়সওয়ালকে শুধুমাত্র রাজ্য বিজেপির সংগঠনের দায়িত্ব পালন করতে বলা এবং অন্যদিকে রাজ্য মন্ত্রিসভার এহেন সম্প্রসারণের নেপথ্যে যথেষ্ট হিসেবনিকেশ রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভা কী কী পদক্ষেপ করে, আসন্ন নির্বাচনের উপর তার প্রভাব বিলক্ষণ পড়বে। পাশাপাশি, বিহারে আপাতত নীতীশের উপর নির্ভরশীল থাকলেও বিজেপি যে ভোটের আগে নিজেদের সংগঠন আরও মজবুত করতে চায়, তা দিলীপ জয়সওয়ালের মন্ত্রী পদে ইস্তফা দেওয়া থেকেই স্পষ্ট। প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসে রাজ্য বিজেপির সভাপতি করা হয়েছিল তাঁকে।
উল্লেখ্যে, INDIA-এর হাত ছাড়ার পর এনডিএ জোটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নীতীশ কুমার শপথ নিয়েছিলেন গত বছরের ২৮ জানুয়ারি। তারপর থেকে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার রাজ্য মন্ত্রিসভা সম্প্রসারিত করা হল। এর আগে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে প্রথমবারের জন্য বর্তমান মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার ঠিক কিছু সময় আগেই সেই পদক্ষেপ করা হয়েছিল।