কেরলের 'মানুষ-খেকো' বাঘের পেট থেকে মৃত মহিলার চুল, কানের দুল এবং পোশাক পাওয়া গেল। সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বন আধিকারিকরা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার কেরলের ওয়েনাড়ের পঞ্চরাকোল্লিতে ভারতীয় ক্রিকেটার মিন্নু মনির কাকিমা রাধাকে হত্যা করেছিল যে বাঘটি, সেটির দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারপর ময়নাতদন্ত করা হয়। আর ময়নাতদন্তের সময় মৃত বাঘের পেট থেকে একজোড়া কানের দুল পাওয়া গিয়েছে। মিলেছে চুলও। যা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে তাঁকে হত্যা করেছিল বাঘটি।
বাঘের ঘাড়ের কাছে ৪টি টাটকা ক্ষত ছিল
সেইসঙ্গে ওই 'মানুষখেকো' বাঘের কীভাবে মৃত্যু হয়েছে, সেটারও উত্তর মিলেছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। বন আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে মৃত বাঘের ঘাড়ের কাছে গভীর ক্ষত ছিল। অনুমান করা হচ্ছে যে এলাকা দখল নিয়ে অন্য কোনও বাঘের (একাধিক বাঘও হতে পারে) সঙ্গে লড়াইয়ের সময় ওই ক্ষত তৈরি হয়েছিল। আর সেই চোটের কারণেই 'মানুষ-খেকো' বাঘের মৃত্যু হয়েছে। চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন প্রমোদ জি কৃষ্ণন জানিয়েছেন যে ঘাড়ের কাছে চারটি টাটকা ক্ষত ছিল। সেই কারণেই বাঘের মৃত্যু হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
যে 'মানুষ-খেকো' বাঘকে ধরার জন্য গত কয়েকদিনে নাকানি-চোবানি খেতে হয়েছে বন আধিকারিকদের। শুক্রবার রাধার মৃত্যুর পরই ওই বাঘটিকে ধরার জন্য তুমুল বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন মানুষ। সেই পরিস্থিতিতে প্রবল চাপ তৈরি হয়েছিল বন আধিকারিদের উপরে। বাঘটিকে 'মানুষ-খেকো' হিসেবে চিহ্নিত করতে বাধ্য হয় সরকার। তারইমধ্যে একবার বনকর্মী এবং বিশেষজ্ঞদের চোখে ধুলো দিয়ে বাঘটি পালিয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
বাঘ দেখা গেলেও ঘুমপাড়ানি ওষুধে কাবু করা যায়নি
কেরলের উত্তর অংশের মুখ্য বন সংরক্ষক কেএস দীপা জানিয়েছেন, বাঘটিকে ধরার জন্য চিফ ভেটেরিনারি সার্জেনের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম তৈরি করা হয়েছিল। রবিবার রাত (ইংরেজি মতে সোমবার) ১২ টা ৩০ মিনিট নাগাদ বিশেষজ্ঞ দল নিশ্চিত হয় যে পিলাকাভু এলাকায় একটি বাঘ আছে। রাত আড়াইটে নাগাদ সেই ঘাতক বাঘটিকে দেখা যায়। ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া হলেও সেটি গায়ে লাগেনি। পালিয়ে যায় 'মানুষ-খেকো'। সেই পরিস্থিতিতে অভিযান চলতে থাকে। পরবর্তীতে ওই এলাকা থেকেই বাঘের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রবল চাপে ছিল সরকার, পড়ল স্বস্তির নিঃশ্বাস
বিষয়টি নিয়ে কেরলের বনমন্ত্রী এ কে শশীন্দ্রন জানিয়েছেন, পঞ্চরাকোল্লি-সহ ওয়েনাড়ের উঁচু জায়গায় যাঁরা বসবাস করেন, তাঁরা বাঘের মৃত্যুর খবরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। ‘মানুষ-খেকো’-র মৃতদেহ উদ্ধার করা হলেও ওয়েনাড়ের যেখানে বাঘের অস্তিত্ব আছে বলে মনে করা হবে, সেখানে বিশেষজ্ঞ দলের অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। যিনি রবিবার রাধার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন।