২০০৯ সালের বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস) গণহত্যার ঘটনায় জাতীয়স্তরের তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেও পাল্টি খেল মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাদের তরফে জানিয়ে দেওয়া হল, আপাতত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, এর আগে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের তরফেই জানানো হয়েছিল, ২০০৯ সালের ওই ঘটনার নেপথ্যে থাকা মূলচক্রীদের খুঁজে বের করতে জাতীয়স্তরের কমিটি গঠন করা হবে। যাতে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের শাস্তি দেওয়া যেতে পারে।
কিন্তু, রবিবার বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে হাইকোর্টকে জানানো হয়, এখনই তারা বিডিআর গণহত্য়া নিয়ে কোনও কমিটি গঠন করছে না। কারণ, ইতিমধ্যেই ওই ঘটনায় দু'টি ফৌজদারি মামলা আপিল বিভাগ এবং ঢাকার একটি আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে।
এদিন, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিনিধি হিসাবে ডেপুটি অ্য়াটর্নি জেনারেল তানিম খান বিচারপতি ফারাহ মেহমুদ এবং বিচারপতি দেবাশিস রায়চৌধুরীর বেঞ্চে একটি চিঠি জমা করেন।
এদিন হাইকোর্টে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় রুজু করা একটি রিট পিটিশনের শুনানি চলছিল। সেই সময়েই ডেপুটি অ্য়াটর্নি জেনারেল সরকারের তরফে এই চিঠি আদালতে পেশ করেন। এরপর আদালতের তরফে স্থির করা হয়, আগামী ৫ জানুয়ারি এই বিষয়ে অর্ডার জারি করা হবে।
এর আগে, গত ২ ডিসেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের তরফ থেকে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চকে জানানো হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে একটি জাতীয় স্বাধীন কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঘটা বিডিআর গণহত্যার নেপথ্যে আসলে কাদের মাথা ছিল, সেই প্রকৃত অপরাধীদেরই খুঁজে বের করবে এই কমিটি।
এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সরকারি সেই কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করে, সেই সংক্রান্ত সমস্ত রিপোর্ট আজকের (১৫ ডিসেম্বর) মধ্যে আদালতে পেশ করতে হবে। এই বিষয়ে সরকারের কী কী প্রস্তাব বা পরিকল্পনা রয়েছে, তাও রিপোর্টে জানাতে বলা হয়েছিল।
তারও প্রায় একমাস আগে, গত ৫ নভেম্বর এই একই ইস্যুতে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ একটি রুল জারি করেছিল, এবং সরকারের কাছে প্রশ্ন করেছিল, কেন এই ঘটনায় আদালত সরকারকে একটি জাতীয় স্বাধীন কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেবে না?
সেই সময়েই আদালতের তরফে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, এই ঘটনায় যে আবেদনকারীরা রিট পিটিশন দাখিল করেছেন, তাঁদের আবেদনের নিষ্পত্তি করতে ১০ দিনের মধ্য়ে এই ধরনের একটি কমিটি গঠন করতে হবে।
মহম্মদ তনবীর আহমেদ এবং বিপ্লব কুমার পোদ্দার নামে সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবীর রুজু করা একটি রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সেই সময়েই একটি রুল জারি করে। এবং গোটা বিষয়টি নিয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চায়।
প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট রিট পিটিশনে আবেদনকারীদের দাবি হল, ২০০৯ সালের ওই গণহত্য়ার তদন্ত করতে একজন অবসরপ্রাপ্ত অ্য়াপিলেট ডিভিশন বিচারকের নেতৃত্বে একটি জাতীয় স্বাধীন কমিটি গঠন করতে হবে।
গত ২০ অক্টোবর ওই রিট পিটিশন আদালতে জমা দেওয়া হয়। তাতে ২৫ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে শহিদ সেনা দিবস হিসাবে ঘোষণা করারও দাবি তোলা হয়েছে।