অবাঙালিদের হোলি স্পেশাল ঠাণ্ডাই, গুজিয়াও এখন দোলে বাঙালিদের খাদ্যতালিকায় নতুন সংযোজন। কিন্তু এই হোলি স্পেশাল ঘিয়ে ভাজা গুজিয়ার উৎস কিন্তু শুধু ভারতের কোনও হেঁশেল নয়। জেনে নিন কোথা থেকে এল এই সুস্বাদু মিষ্টি খাবার।
গুজিয়া (ছবি: সংগৃহীত)
সামনেই দোল। আর দোল মানে শুধু তো রঙ খেলা নয়, সঙ্গে ভালো-মন্দ খাবার খাওয়ারও একটা বিষয় থাকে। দোল মানেই বাঙালিদের কাছে মঠ, ফুট কড়াই। তবে অবাঙালিদের হোলি স্পেশাল ঠাণ্ডাই, গুজিয়াও এখন দোলে বাঙালিদের খাদ্যতালিকায় নতুন সংযোজন। কিন্তু এই হোলি স্পেশাল ঘিয়ে ভাজা গুজিয়ার উৎস কিন্তু শুধু ভারতের কোনও হেঁশেল নয়। জেনে নিন কোথা থেকে এল এই সুস্বাদু মিষ্টি খাবার।
খোয়া-ক্ষীর ও নানা বাদামের পুর দেওয়া এই অর্ধচন্দ্রাকার মিষ্টি ভারতের হোলি উদযাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু এই মিষ্টির উৎস শুধু ভারত নয়। নানা সাংস্কৃতিক বিনিময়, রন্ধন পদ্ধতির বিবর্তন ফল এই কুরমুড়ে মিষ্টি স্বাদের গুজিয়া।
ভগবান কৃষ্ণের সঙ্গে দোল উৎসব বা হোলির যোগ রয়েছে। আর অনেকের মতে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের সঙ্গে নাকি এই খাবারেরও বিশেষ যোগ আছে। একটা সময় বৃন্দাবনের মন্দিরগুলিতে, বিশেষ করে ১৫৪২ সালে নির্মিত রাধারমন মন্দিরে গুজিয়াকেই প্রসাদ হিসেবে পরিবেশন করা হত। এই মন্দিরটির নৈবেদ্যের প্রধান অংশ ছিল গুজিয়া এবং চন্দ্রকলা। এখনও এখানে এই প্রসাদই বিতরণ করা হয়।
তবে কেবল ধর্মীয় যোগ নয়। দেশের ইতিহাস ও খাবারের ইতিহাসের নানা বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এই গুজিয়া এসেছে। প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থগুলিতে 'করণিকা' নামে একটি মিষ্টির উল্লেখ রয়েছে, যা বাদাম, মধু ইত্যাদি দিয়ে প্রায় একই ভাবে তৈরি করা হত। এই মিষ্টিকেই বর্তমানের গুজিয়ার পূর্বপুরুষ বলা যেতে পারে। প্রত্নতাত্ত্বিক নানা প্রমাণ থেকে জানা গিয়েছে যে মৌর্য সাম্রাজ্যে গুজিয়ার মতো এক ধরনের মিষ্টি ছিল। সেই যুগের ভাস্কর্যতেও ওই অর্ধচন্দ্রাকার মিষ্টির ছবি পাওয়া গিয়েছে।
তাছাড়াও ত্রয়োদশ শতাব্দীর ঐতিহাসিক নথিতেও একই ধরণের মিষ্টির বর্ণনা পাওয়া যায়। যা খাওয়ার আগে রোদে শুকনো করতে হত। তাছাড়াও গুজিয়ার বিবর্তন সম্পর্কে সবচেয়ে আকর্ষণীয় তত্ত্বগুলির মধ্যে একটি হল তুর্কি-প্রভাব। অনেক ইতিহাসবিদ বিশ্বাস করেন যে, তুরস্ক থেকে পেস্ট্রি বাকলাভা মতো একধনের মিষ্টির খোঁজ পাওয়া যায়। অনেকের মতে গুজিয়ার উৎস সেটাই। দুটি মিষ্টির বাইরের অংশ ময়দা দিয়ে তৈরি। দুটোরই ভিতরে থাকে নানা রকমের বাদাম। যদিও পেস্ট্রি বাকলাভা মধু এবং চিনিতে ভেজাতে হয়, এর বাইরের স্তর বেশ ঝুরঝুরে হয়। অন্যদিকে গুজিয়ার বাইরের স্তর শক্ত, আর এটা ঘি দিয়ে ভাজা হয়।
অনেকের মতে সম্ভবত সিল্ক রুট ধরে বাণিজ্য সূত্রে এদেশে এই খাবার এসেছিল। উত্তর প্রদেশ এবং আনাতোলিয়া (আধুনিক তুরস্ক)-এর মধ্যে ব্যবসায়ীরা কেবল পণ্যই নয়, নানা সংস্কৃতি ও খাদ্যাভাসেরও বিনিময় করেছিলেন। তুরস্কে এই খাবার খেয়ে দেশে ফিরে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা নিজেদের হাতের কাছে থাকা উপাদান দিয়ে এই মিষ্টি বানাতে গিয়েই সম্ভবত গুজিয়ার উৎপত্তি।