ক'দিন আগেই কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছিলেন, 'আমরা (সংখ্যালঘুরা) একদিন সংখ্যাগুরুর থেকেও সংখ্যাগুরু হব।' তাঁর সেই মন্তব্য নিয়ে সমালচোনা শুরু হয়েছিল। এমনকী তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে এই মন্তব্যের থেকে দূরত্ব তৈরি করা হয়েছিল। এই আবহে বৃহস্পতিতে নিজের সেই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সাফাই দিলেন ফিরহাদ। বৃহস্পতিবার ওয়াকফ বিল প্রত্যাহারের দাবিতে আয়োজিত এক সফায় ফিরহাদ বললেন, 'সব ধর্মকে হৃদয় দিয়ে সম্মান করি। কিন্তু আমার নিজের ধর্ম আমি ১০০ শতাংশ মানি।' (আরও পড়ুন: কর্ণাটকে আটক ১৫৯ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী, সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন মন্ত্রীর)
আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস নিয়ে বিস্ফোরক ED, কে কত কোটি দিয়েছে?
ফিরহাদের কথায়, 'পিছিয়ে পড়া মানুষের শিক্ষার অগ্রগতির কথা বলা যদি অন্যায় হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবে আমি অন্যায় করেছি। সবাইকে শিক্ষিত হতে হবে।' এদিকে বিতর্কিত মন্তব্য প্রসঙ্গে ফিরহাদ বলেন, 'আমি পরোয়া করি না। কারণ আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহ ছাড়া কারও সামনে মাথানত করা যায় না। কর্মটাই হল আমার জীবন, আর সেটা করাচ্ছেন আল্লাহতালা। তিনি থাকতে আমার কোনও ক্ষতি হবে না। তবে এভাবে হিন্দু বন্ধুদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।' (আরও পড়ুন: দিল্লিতে 'ঝড়ের' মাঝেই বাংলায় এলেন অমিত শাহ, কী কর্মসূচি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর?)
উল্লেখ্য, সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ফিরহাদ বলেছিলেন, 'বাংলায় আমরা ৩৩ শতাংশ। কিন্তু ভারতে মাত্র ১৭ শতাংশ। তবে আমরা নিজেদের সংখ্যালঘু ভাবি না। আমরা ভাবি আল্লাহর রহমত যদি আমাদের উপর থাকে তাহলে আমরা একদিন সংখ্যাগুরুর থেকেও সংখ্যাগুরু হব। আল্লাহর এই নির্দেশ তথা ইচ্ছাকে আমাদের তাকত দিয়ে হাসিল করতে পারব।' তিনি আরও বলেছিলেন, 'আমাদের সম্প্রদায়... অনেক জায়গায় আমি দেখি যে কিছু হলেই মোমবাতি মিছিল করে থাকে। উই ওয়ান্ট জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস। আমি বলি, মিছিল করে জাস্টিস হবে না। নিজের ক্ষমতা এমন করতে হবে যে আপনি নিজেই জাস্টিস দেওয়ার যোগ্য হবেন, জাস্টিস চাইবেন না। জাস্টিস দেবেন।' তাঁর বক্তব্য ছিল, 'আজও কলকাতা হাইকোর্ট থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট- হাতেগোনা কয়েকজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিচারপতি আছেন। কারণটা কী? কারণ এতদিন আমাদের সেটার যোগ্য করে তোলা হয়নি। যেখানে আমরা দাঁড়িয়ে বিচার দিতে পারি। সমাজতন্ত্রের মানে এই নয় যে যিনি বড় জায়গায় আছেন, তাঁকে টেনে নামানো হবে। বরং সেই বড় জায়গায় পৌঁছাতে হবে নিজেকে।' (আরও পড়ুন: আপনিও CM হবেন, অজিত পাওয়ারকে বললেন ফড়ণবিস! কর্পোরেট স্টাইলে ভাগ হবে শিফট)
এরপর তৃণমূলের তরফ থেকেও এই মন্তব্যের নিন্দা করা হয়েছিল। এই আবহে বাবার মন্তব্যের ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছিলেন ফিরহাদকন্যা প্রিয়দর্শিনী। গত জুলাইয়েই ফিরহাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করার অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁরা। সেইসময় একটি ভিডিয়ো (সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা) পোস্ট করেছিলেন বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাতে ফিরহাদকে বলতে শোনা গিয়েছিল, 'যাঁরা দুর্ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে, যাঁরা ইসলাম নিয়ে জন্মাননি, তাঁদেরও দাওয়াত-এ-ইসলাম...অর্থাৎ ইসলামে দাওয়াত দিয়ে তাঁদের মধ্যে ইমান নিয়ে আসলে আল্লাহ-তালাকে খুশি করা হবে। ইসলাম ধর্মাবলম্বী নন, তাঁদের মধ্যে ছড়াতে হবে।' সেখানে ফিরহাদ আরও বলেছিলেন, 'শক্তিশালী মনে হয়, যখন দেখি সবাই এখানে টুপি পরে আছেন, হাজার-হাজার মানুষ বসে আছেন, তখন মনে হয় ইসলামের ঐক্য একটা জায়গায় আছে, যেখানে কেউ কোনওদিন আমাদের দমাতে পারবে না।'