নীতি আয়োগের বৈঠকে বক্তব্য রাখার সময় তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ অসত্য বলে জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। এর পর কলকাতা ফিরে মাইকের নাম মুখে নিলেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার মমতার অভিযোগ, তাঁকে বক্তব্য রাখতে বাধা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। প্রশ্ন উঠছে, দিল্লিতে বারবার মাইক বন্ধের অভিযোগ তুললেও কলকাতা পৌঁছে কেন নিরব রইলেন তিনি।
আরও পড়ুন - চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৫ বছরের কিশোরীকে ধর্ষণ করল ৬২ বছরের TMC নেতা
পড়তে থাকুন - তৃণমূল জমানায় রাজ্যের ১৯টি পুরসভায় নিয়োগের অর্ধেকই ভুয়ো, চার্জশিট দিয়ে জানাল CBI
শনিবার বিকেলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কলকাতা ফেরেন মমতা। সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ যায়নি, বয়কট করেছিল। আমি ভেবেছিলাম গিয়ে সবার কথা বলব। আমি ওই তিন চার মিনিটে যা পেরেছি পেরেছি ওই টুকু বলেছি। বাংলার বঞ্চনা ও সমস্ত বিরোধীশাসিত রাজ্যকে যে ভাবে বাজেটে বঞ্চনা করা হয়েছে। ও সমস্ত বিজেপিশাসিত রাজ্যকে যে ভাবে সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এবং যারা ওদের শরিক। আমাদের আপত্তি নেই কাউকে যদি বেশি টাকা দেয়। কিন্তু কেউ খাবে আর কেউ খাবে না সেটা তো হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘আমি এটাও বলেছি, যে আপনারা তো শুধু নির্দেশ দেন। আর ছবি লাগান। কাজ তো করতে হয় রাজ্যগুলোকে। কিন্তু সব সামলাতে হয় রাজ্যগুলোকে। তাই রাজ্যগুলোকে পঙ্গু করে দিলে আগামী দিনে কেন্দ্রটাও পঙ্গু হয়ে যাবে।’
এর পরই রাজনাথ সিংয়ের বিরুদ্ধে বক্তব্যে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘দেখলাম বারবার বেল বাজাচ্ছে। রাজনাথ সিং পরিচালনা করছিলেন, একপাশে প্রধানমন্ত্রী ও একপাশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ছিল নিশ্চই বলে দিয়েছে। আমার আগে চন্দ্রবাবু নায়েডু বলেছে ২০ মিনিট। অসম, অরুণাচল, ছত্তিসগড়, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীরা। যদিও রাজ্যগুলো খুবই ছোট ছোট। তাও ছোট – বড়য় ফারাক থাকা উচিত বলে মনে করি না। সমার সম্মান সমান। তারা ১৫ – ২০ মিনিট করে বলার সময় পেয়েছেন। আর আমারটা যেই ৫ মিনিটে পড়তে যাবে, বেল টিপে টিপে টিপে টিপে স্টপ স্টপ স্টপ.... আমি বললাম ঠিক আছে স্টপিং। যদি শুনতে না চান, চললাম। আমি বয়কট করে চলে এসেছি। এর মধ্যে আমি একটা ইন্দো - ভুটান রিভার কমিশন করার কথা বলেছি।’
উল্লেখযোগ্যভাবে দিল্লিতে সংবাদমাধ্যমকে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কলকাতায় দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় ‘মাইক’ শব্দটি একবারও উচ্চারণ করেননি মমতা। দিল্লিতে যেখানে মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে সরব হয়েছিলেন, সেখানে কলকাতায় বললেন, আমাকে বাধা দেওয়া হয়েছে।
এদিন দিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠক থেকে বেরিয়ে মমতা বলেন, ‘আমি দেশের স্বার্থে, বাংলার স্বার্থে, রাজ্যগুলোর স্বার্থে এসেছি একা। বিরোধী দলগুলির আর কেউ আসেনি। আমি পরিষ্কার বলছি, আপনারা বাজেটে আমাদের বঞ্চনা করেছেন। আপনারা বাংলার সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছেন। আপনারা বিরোধী দলকে কোনও সুযোগ দেন না। তিন বছর ধরে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বন্ধ, গ্রামীণ রাস্তা প্রকল্প বন্ধ, সমস্ত কিছু বন্ধ করে রেখেছে। এমনকী ফুড সাবসিডি পর্যন্ত দেয় না। আমরা গত বছর পর্যন্ত ১ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকা পাই। এই বাজেটেও কিছু নেই, শুধু জ়িরো। এইটুকু বলার সাথে সাথেই আমার মাইকটা বন্ধ করে দিল।'
আরও পড়ুন - পার্থদের জামিনের মামলায় বিরাট মোড়! মুখ্য়সচিবের অনুমোদন ছাড়াই করা যাবে শুনানি
মমতা মিথ্যাচার করছেন বলে দাবি করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বলেন, ‘মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরহিত্যে নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগদান করতে এখানে এসেছিলেন। তিনি যখন বলছিলেন আমরা শুনছিলাম। প্রত্যেক মুখ্যমন্ত্রীর জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ ছিল। সেটা প্রত্যেক টেবিলের সামনে থাকা স্ক্রিনে দেখা যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন যে তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’